মুহাম্মদ মহিন উদ্দিন:
ঈদ মানে খুশি, আর এ খুশি উদযাপনের অন্যতম উপাদান হলো ভালো বা নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা। তাই নতুন পোশাক কেনার জন্য নাজিরহাট, সরকারহাট,হাটহাজারী পৌরসভা, চৌধুরীহাট, আমান বাজার ও নগরীর বিভিন্ন শপিংমল, শোরুম ও ফুটপাতের দিকে ছুটছে মানুষ।
মার্কেট ঘুরেও অনেক সময় পছন্দের পোশাক পাওয়া যায় না। আবার পছন্দ হলেও রয়েছে সাইজ, ফিটিংসের হেরফের।তবে এসব ঝামেলা এড়াতে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা তাদের মনের মতো পোশাক বানাতে ছুটে যান দর্জির দোকানে।
টেইলার্সের দোকানিরা বলছেন, আগে প্রথম রমজান থেকেই দর্জিপাড়া ব্যস্ত হয়ে যেতো। এখন তা ১০ রমজানের শেষদিকে থেকে বাড়তে শুরু হয়েছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিরতিহীন চলতো সেলাই মেশিন, দম ফেলার ফুরসত থাকতো না কারিগরদের।
টেইলার্স মালিক হাসান বলেন, এ বছর ব্যবসা একেবারে ভালো না। অর্ডার খুব কম। আগে প্রথম রোজা পর আর অর্ডার নেওয়ার সুযোগ থাকতো না, খুব পরিচিত ছাড়া কারো অর্ডার নিতাম না। করোনা থেকে আমাদের অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের দোকান খোলা আছে চাঁদরাত পর্যন্ত। এখন আর আগের মতো দর্জিপাড়ার ব্যস্ততা নেই। এখন বেশিরভাগ নারী ক্রেতাই পোশাক ফিটিংস কিংবা স্টিচ করতে আসেন। এখন ক্রেতারা রেডিমেড পোশাক বেশি কিনেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পোশাক বানাতে দর্জি পাড়ার মূল ব্যস্ততা থাকে।
হাটহাজারী পৌরসভার এলাকার স্কুল শিক্ষিকা নাজমুন নাহার, ব্যাংকার শারমিনসহ অনেকেই বলেন, ঈদ এলে টেইলার্সদের রেট বেড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত মজুরি হাঁকায় তারা। যে থ্রি-পিস অন্য সময় ৩০০ টাকা মজুরি নেয়, সেটা ঈদে ৫০০ টাকার বেশি হয়ে যায়। এমন চড়া মজুরি দিয়েই আমাদের বাধ্য হয়ে কাপড় সেলাই করাতে হয়।
তিনি বলেন, একটা থ্রি-পিস বানাতে ১৫০০ টাকার বেশি পড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে পোশাক বানাতে গিয়ে ফিটিংস ভালো হয় না। এ কারণে এখন বেশিরভাগ মেয়েরা মার্কেটমুখি। সেখানে দেখে, ট্রায়াল দিয়ে পছন্দের পোশাক কেনা যায়।
উপজেলার বিভিন্ন টেইলার্স ঘুরে দেখা গেছে, সুতির থ্রি-পিস ৫০০ টাকা, ডিজাইনসহ থ্রি-পিস ৮০০ টাকা, শাড়ির ব্লাউজ ৮০০ টাকা, বোরকা ৫০০ টাকা মজুরি নিচ্ছে টেইলার্সগুলো। অন্যদিকে, শার্ট ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, প্যান্ট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি নেওয়া হচ্ছে। আর পান্জারির মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, আর পায়জামার মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
হাটহাজারী পৌরসভার অদুদিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক জামাল সাত্তার, আবু তৈয়ব, শাহাদাত হোসেন রাজীবসহ অনেকেই জানান, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। অন্যদিকে, কম দামে চায়না ও ভারত থেকে জামা-কাপড় আসছে। কাপড় কিনে একটা পাঞ্জাবি বানাতে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা খরচ লাগে। কিন্তু বাইরে আরও কমে এ পোশাকটা পাওয়া যাচ্ছে। তাই এবার বাইরে শপিংমল থেকে পাঞ্জাবি কিনবো।
তারা আরও বলেন, দর্জি দিয়ে পোশাক বানালে খরচ আরও বেশি পড়ে। বেশিরভাগ সময়ই দর্জিরা মনমত পোশাক তৈরি করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে ঈদের পোশাক নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়।